সামরিক শাসনের সংজ্ঞা দাও। অথবা, সামরিক শাসন বলতে কি বুঝ?

ভূমিকা: 

পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সামরিক বাহিনী দেশের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একটি শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সামরিক বাহিনীর দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে উৎকৃষ্ট ও উন্নত। প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করায় সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে অন্যান্য গোষ্ঠী ও শ্রেণি থেকে আলাদা ভাবতে শেখায়। সামরিক বাহিনী তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও পেশাদারিত্বের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নানা দুর্বলতার সুযোগে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। বিগত শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতির গতি-প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

সামরিক শাসনের সংজ্ঞা দাও

সামরিক শাসনের সংজ্ঞা: 

সাধারণত বেসামরিক কার্যাবলি যখন সামরিক লোক দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে সামরিক শাসন বলে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যখন বেসামরিক লোকের পরিবর্তে সামরিক লোক আসে তখনই ঐ অবস্থাকে সামরিক শাসন বলে।

নিম্নে সামরিক শাসনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো:

সামরিক শাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফাইনার (Finner) বলেন, "সামরিক বাহিনী যখন তার নিজস্ব নীতি বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে তাকেই সামরিক শাসন বলে।"

Prof. Nazrul Islam বলেন, "সামরিক শাসন কতকগুলো Techniques এর সমন্বয়ে যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর Policy প্রকাশ পায়। এ সামরিক শাসন অবৈধতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে। সামরিক শাসনের ক্ষেত্রে গতানুগতিক সাংবিধানিক কাঠামো শাসনকার্যে কোনো সহায়তা প্রদান করে না।"

অধ্যাপক এলান আর বল (A. R. Ball) বলেন, "সামরিক শাসন বলতে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বা সোজাসুজি ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করাকে বোঝায়।"

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, সামরিক শাসন যেমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে, তেমনিভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা দেয়। ফলে দেশে বিনিয়োগ কমে যায় বেকারত্ব বাড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। ব্যাপক গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়। অনুন্নত বিশ্বে সামরিক শাসনের প্রচলন বেশি; যেমন-বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চিলি, আর্জেন্টিনা, প্রভৃতি রাষ্ট্র।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url